নার্সিং পেশার উন্নয়নে প্রস্তাবনা (১ম কিস্তি)
প্রকাশিত : ১০:২২, ১৭ ডিসেম্বর ২০২০
বাংলাদেশে নার্সিং পেশার গোড়াপত্তন থেকে অদ্যবধি অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। দ্বিতীয় এবং প্রথম শ্রেণি পদমর্যাদায় নার্সদের চাকরি নিশ্চিত হয়েছে। স্বতন্ত্র অধিদপ্তর একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত এবং নার্সদের সরকারি কর্ম কমিশনের মাধ্যমে নিয়োগদান নার্সিং ক্যারিয়ারের মাইলফলক।
বিগত দশ বছরে প্রায় ২৫ হাজারের অধিক নার্স নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নিয়েনার বা নার্সি উচ্চশিক্ষা গবেষণা কেন্দ্র আমাদের গর্ব। তবু আমার ক্ষুদ্র মেধায় পেশার উন্নয়নে যদি কাজে লাগে কিছু প্রস্তাবনা পেশ করলাম। অবশ্য আমরা সে প্রস্তাবনাটি চট্টগ্রাম নার্সিং কলেজের স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে তৎকালীন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রয়াত মেয়র আলহাজ্ব এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী মারফত সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রয়াত শ্রদ্ধেয় আলহাজ্ব মোহাম্মদ নাসিম স্যারের নিকট প্রেরণ করেছিলাম।
পরে মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়ার জন্য একটি নির্দেশনাও পাঠিয়েছিলেন সেবা পরিদপ্তরে। সেই প্রস্তবনাটার আলোকে পেশ করলাম-
নিয়োগ প্রদান
১. প্রথম শ্রেণির শূন্যপদগুলোতে ক্যাডার সার্ভিসের মাধ্যম সরাসরি নিয়োগ চালুকরণ।
২. দ্বিতীয় শ্রেণির শূন্যপদগুলোতে ননক্যাডার হিসেবে নিয়োগ প্রদান।
৩. নার্সিং কলেজগুলোতে শিক্ষকের পদগুলো শূন্য রয়েছে, এখন অবশ্য নিয়োগ দিতে অধিদপ্তরও বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। শিক্ষক সংকট নিরসনে বর্তমানে যে সকল নার্সদের উচ্চ শিক্ষা সম্পন্ন আছে তাদের ১ম ও ২য় শ্রেণির পদমর্যাদা সম্পন্ন পদগুলোতে ক্যাডার ও ননক্যাডার পদ্ধতিতে নিয়োগ প্রদান করা যেতে পারে।
নিয়োগের সমস্ত প্রক্রিয়া বিপিএসসির মাধ্যম হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ছাড়া বাকি অন্য যেসব সংস্থায় নার্সদের নিয়োগের ক্ষেত্রে ১ম বা ২য় শ্রেণি নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে, এখানে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ ডিজিএনএম’র একজন প্রতিনিধির মাধ্যমে নিয়োগ পরিচালনা করবেন। এখনো দেখা যায়, অনেক জায়গায় ৩য় শ্রেণি পদমর্যাদায় নিয়োগ দেয়া হয়। যেটি অনুচিত।
প্রশিক্ষণ
নিয়োগকৃতদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সরকারি কর্মচারী বিধিমালা, শুদ্ধচার নীতিমালা, পেশাগত দায়িত্ব, ক্ষমতা, সীমাবদ্ধতা ইত্যাদি সমন্ধে সম্যখ জ্ঞান প্রদান করা। এক্ষেত্রে নিয়েনারের সহায়তা নেয়া যেতে পারে।
শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ( যেমন- পাঠদান পদ্ধতি, পাঠটিকা তৈরি, আইটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ) ব্যবস্থা করা। এক্ষেত্রে সিএমই বা সেন্টার ফর মেডিকেল এডুকেশনের সহায়তা নেয়া যেতে পারে।
কোর্সকারিকুলাম ও সিলেবাস
বিশ্বের অন্যন্য দেশের সাথে মিল রেখে যুগোপযোগী নার্সিং কোর্স কারিকুলাম প্রণয়ন করা। এ কোর্স কারিকুলামটি International Council for Nurses (ICN) এর সাথে বাংলাদেশ নার্সিং এন্ড মিডওয়াফারি কাউন্সিল (BNMC)যৌথ সমন্বয় করে করলে নার্সদের বিদেশে ক্যারিয়ারে গঠনে সহায়ক হবে।
উচ্চ শিক্ষা গবেষণা খাতে বৃত্তি চালু
গবেষণা খাতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ বাড়িয়ে উচ্চ শিক্ষার দ্বার খোলা হোক। বিভিন্ন পোস্ট গ্রেজুয়েশন ডিগ্রি অর্জনের ক্ষেত্রে ভর্তুকি বাড়ানো হলে অনেকে উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণায় আগ্রহী হবেন। শিক্ষকদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা শর্ত এ বিধান চালু করা জরুরি।
বিশেষায়িত নার্সিং শিক্ষা চালু
আমাদের দেশে এখন সরকারি চাকরিরত নার্সদের ইনসার্ভিস বিশেষায়িত ট্রেনিং করানো হচ্ছে। এটি সত্যি ভাল খবর। নার্সদের পোস্ট গ্রাজুয়েশন করার পর স্ব স্ব বিষয় অনুযায়ী নিয়োগ প্রদান করা গেলে এক্ষেত্রে আরো বেশি লাভবান হবেন।
যেমন- ইমারজেন্সি নার্সিং, ট্রমা নার্সিং, জেরিয়াট্রিক নার্সিং, স্ক্রাব নার্সিং, কার্ডিয়াক নার্সিং।
অবৈধ নার্সিং প্রাকটিস বন্ধকরণ
বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে বিভিন্ন পদের নাম যেমন- এইড নার্স, জুনিয়র নার্স ইত্যাদি ব্যবহার করে অনিবন্ধিত বা নার্সিং ডিগ্রিবিহীনদের দিয়ে নার্সিং কাজ করা হয়। এসব বন্ধে বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি আইন ২০১৬-এর যথাযথ প্রয়োগ করা গেলে নার্সিং পেশার মান বৃদ্ধি পাবে।
আবাসন ব্যবস্থা
নার্সরা যেহেতু রোস্টার ডিউটি করেন তাদেরকে হাসপাতালের নিকটতম স্থানে থাকতে হয়। ২য় শ্রেণির পদমর্যাদায় পদায়নের পর অনেক জায়গায় পদমর্যাদা অনুযায়ী সরকারি আবাসন ব্যবস্থা হয়ে উঠেনি। তবে আমরা আশাবাদী সদাশয় সরকার দ্রুত উদ্যোগ নিবেন।
চলমান ...!
লেখক- নার্স ও পুষ্টিবিদ,কক্সবাজার।
ইমেইলঃ syedahmedtanshiruddin@gmail.com
এআই/এসএ/